গোমতী নদীর চরে আগাম চাষ হয়েছে ফুলকপি, কৃষকের মুখে হাসি
প্রতিনিধির নাম :
-
প্রকাশিত:
মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫
-
৪৩
বার পড়া হয়েছে

- মোঃ মাসুদ রানা, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি: কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের সুবর্ণপুর এলাকা। গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ সড়ক হয়ে সুবর্ণপুরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল নদীর বিস্তীর্ণ চরে সবুজের সমারোহ। যত দূর চোখ যায় সারি সারি ফুলকপির গাছ। চরের উর্বর মাটিতে দ্রুত বেড়ে উঠছে শীতের আগাম সবজি ফুলকপি। কৃষকদের কেউ জমিতে আগাছা পরিষ্কার করছিলেন, কেউ সার ছিটাচ্ছিলেন, আবার কেউ গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছিলেন।
সুবর্ণপুর এলাকার গোমতীর চরের কৃষকেরা বলছেন, প্রায় এক মাস আগে তাঁরা ফুলকপির চারা রোপণ করেছেন। এরই মধ্যে ফুলকপির কলি বের হতে শুরু করেছে। রাতে হালকা শীতও পড়ছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। শীতের সবজি ফুলকপি আগাম বাজারে তুলে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন কৃষকেরা।
গোমতী নদীর সুবর্ণপুর চরে প্রায় ২০ বছর ধরে ফসল উৎপাদন করছেন সত্তরোর্ধ্ব আবদুস সাত্তার। একসময় সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে চরের ২৪ শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। আরেকজনকে নিয়ে তিনি জমিতে আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে ২৪ শতাংশ জমিতে ৩ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছি। প্রতি হাজার চারা কিনেছি ২ হাজার টাকা করে। এখন পর্যন্ত মোট ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে; আরও কিছু খরচ হবে। এখন রাতে হালকা শীত পড়ছে। ১৫ দিন পর থেকেই ফুলকপি বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করছি। এর মধ্যে কপি বের হতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে সবজির দাম ভালো। আশা করছি ভালোই লাভ হবে সবকিছু ঠিক থাকলে।’
এখন জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে গোমতী নদীর সুবর্ণপুর চরে
সরেজমিন দেখা যায়, চরের মাটিতে সবুজ ফুলকপির পাতায় উঁকি দিয়ে আছে সাদা কলি। এ দৃশ্য প্রকৃতির সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু সুবর্ণপুর চরই নয়, পাশের অরণ্যপুর, জালুয়াপাড়া, সামারচর, ছাওয়ারপুর, গাজীপুরসহ কয়েকটি চরে গিয়েও শীতের সবজি ফুলকপি চাষের দৃশ্য দেখা গেছে। সব স্থানেই কৃষকেরা এখন ফসলের যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
চরের কৃষক আবু সাঈদ তাঁর ১৬ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন ফুলকপি। এরই মধ্যে তাঁর খেতে ফুলকপি বের হতে শুরু করেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার দিলে গাছে শক্তি পাইবো। তাড়াতাড়ি বড় হইবো ফুলকপি। এর লাইগ্যা হালকা সার দিতাম আছি। বাজারে শীতের শুরুর আগে ফুলকপির দাম ভালা থাকে। আশা করতাছি তখন বেচতে পাইরাম। আমি ২ হাজার ফুলকপির চারা লাগাইছি। ফলন ভালাই দেখতাছি। বাকিটা আল্লাহর ওপর ভরসা। তয় কৃষি বিভাগ থাইক্যা আমরার বেশি খবর লয় না। তাঁরার পরামর্শ পাইলে ফলন আরও ভালা হইতো।’
সার দিলে গাছে শক্তি পাইবো। তাড়াতাড়ি বড় হইবো ফুলকপি। এর লাইগ্যা হালকা সার দিতাম আছি। বাজারে শীতের শুরুর আগে ফুলকপির দাম ভালা থাকে। আশা করতাছি তখন বেচতে পাইরাম।
কুমিল্লায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গোমতী নদীর চরাঞ্চল সবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এখানকার মাটি উর্বর ও পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ভালো। ফলে প্রতিবছরই চরের কৃষকেরা আগাম ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চাষ করে থাকেন। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন চরে কৃষকেরা এ বছর ফুলকপির আগাম চাষ বেশি করেছেন। সম্প্রতি বৃষ্টি হয়েছে, এখন রাতে কিছুটা ঠান্ডাও পড়ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ফুলকপি বাজারে আসবে বলে তাঁর আশা। এতে কৃষকেরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন।’
সংবাদটি শেয়ার করুন
আরো সংবাদ পড়ুন