এ.এস আব্দুস সামাদঃ ভিুক্ষুক মুক্ত উপজেলা কোটচাঁদপুর। উপজেলার প্রধান সড়কেও ছিল এমনই সাইন বোর্ড। অথচ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী ১২৯ জন ভিক্ষুকের তালিকা আছে তাদের কাছে। প্রতিদিন শতাধিক ফকিরের মুখোমুখি কোটচাঁদপুরবাসী। ভিক্ষা যেন বিনা পূজিঁর ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভিক্ষার ধরনও পাল্টিয়েছেন ভিক্ষুকরা, তারা এখন ভিক্ষা চাওয়ার বদলে বিভিন্ন অজুহাতে সাহায্য চেয়ে থাকেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় একাকি কিংবা ছোট ছোট দল বেঁধে কোটচাঁদপুর শহরে ভিক্ষা করছেন কালীগঞ্জ থেকে আগত ভিক্ষুক খুশি, পারভিনা, জরিনা, ফাতেমা, কহিনুর ও কিশোরী মিতা, হাকিমপুরের আকর আলী, আলোকদিয়ার সালমান, যশোরের রাশিদা, আকলিমা, জাহিরুল, ফাতেমা, রহিমা, কাকলী খোকন ও চৌগাছার পারভেজ, লালবানুসহ আরো অনেকে । তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা সবাই পেঠের দায়ে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ শিশু, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী কেউবা সুস্থ মানুষ বটে। তারা দরিদ্র্যতার ধাক্কায় দলবেঁধে নেমেছেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় অনেকেই বয়স কম এবং সুস্থও আছেন অথচ বিনা পুজিঁতে এমন ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। সকাল হলেই ছুটছেন শহর থেকে গ্রামে। জীবিকার সংগ্রামে হাত পাতছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ও পথচারিদের কাছে। শুধু এরাই নন। এমন অসংখ্য ভিক্ষুকের জটলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কোটচাঁদপুর বাসী। দলবেঁধে ট্রেন থেকে নেমে ভিক্ষাবৃত্তির এমন দৃশ্য দেখা যায় প্রতি শনিবারসহ সপ্তাহের প্রতিদিনই। নোয়াপাড়া, যশোর, চৌগাছা, কালীগঞ্জ থেকে দলে দলে ভিক্ষুক প্রবেশ করে কোটচাঁদপুর শহরে। যাতায়াতের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করেন সস্তা ট্রেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গেল করোনার প্রভাব আর দ্রব্যমূল্যর অগ্নিমূল্যসহ নানা কারণে দরিদ্র্য পরিবারে বেড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এছাড়া শারীরিক অক্ষমতা, পঙ্গত্ববরণ, বিধবা হওয়া, অসুস্থ স্বজনের চিকিৎসাসেবা, মেয়েকে পাত্রস্থ ও সন্তানদের কাছে বিতাড়িত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন তারা। তাদের কেউ বলেছেন অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসাসেবা, রোগাক্রান্তে পঙ্গত্ববরণে ভিক্ষুক হয়েছেন। কেউবা জানিয়েছেন স্বামী মারা গেছেন, সন্তানেরা দেখেন না, আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়ায় বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। আবার অনেকে বাণিজ্যিক হিসেবেও এই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মুদি ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন ভিক্ষুকের পরিমান এতো বেশি যে তাদের সামলাতে গিয়ে খরিদ্দার বিরক্ত হয়ে ফেরত যায়। একই কথা বলেন বাজারের ব্যসায়ী মোঃ আলামিন ও জিয়া। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদারপুর ইউনিয়ে ১৩ জন, দোড়া ইউনিয়নে ১৬ জন, কুশনা ইউনিয়নে ৫৩ জন, বলুহর ইউনিয়নে ১৫ জন, এলাংঙ্গী ইউনিয়নে ২৭ জন এবং পৌর শহরে ৫ জনসহ উপজেলায় মোট ১২৯ জন ভিক্ষুক আছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ভিক্ষুক পূর্ণবাসনের জন্য বরাদ্দ আছে ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা, যা মাথা পিছু ৮২৯/- করে ভিক্ষা দেয়া যায়। এ টাকা দিয়ে ১ জনের বেশি ভিক্ষুককে পূর্ণবাসন সম্ভব নয় যদিও চেষ্টা করা হচ্ছে ৩ থেকে ৪ জন ভিক্ষুকের মধ্যে ছাগল বা গরুর বাছুর ক্রয় করে দিয়ে তাদের পূর্ণবাসনের বলেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা। এ পর্যন্ত পূর্ণবাসনের মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বরং সংখ্যায় বেড়েছে বলেও জানান তিনি। কালীগঞ্জের জাকিরুল ইসলাম (৩৫) জানালেন, নানা অভাব-অনটনের সংসার তার। এক সময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এরই মধ্যে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছেন। তাই পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টায় অন্যের কাছে হাত পাতছেন তিনি।
লালবানু (৫৫) নামের আরেক ভিক্ষুক বলেন, এক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলের সংসার তেমন চলে না। তাই নিজেকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হচ্ছে। এবিষয় স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী রেজাউল করিম বলেন, সমাজ থেকে ভিক্ষুক হ্রাস কল্পে প্রথমত প্রতিবেশীদের সহানুভূতিশীল হতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি বরাদ্দের সুবিধাগুলো লুটপাট না করে সংশ্লিষ্টদের সুষম বন্টন অবশ্যক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মনিরুজ্জামান সুমন
মোবাইল :০১৯৩০-৫৫৬৩৪৩
ই-মেইল: 𝐬𝐮𝐦𝐨𝐧𝟔𝟑𝟑𝟔@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :
৭১,পুষ্প প্লাজা (৪র্থ তলা) কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত